সিলেটে চা শ্রমিকদের ২ দিনের আল্টিমেটাম

সিলেটে চা শ্রমিকদের ২ দিনের আল্টিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক:: বকেয়া মজুরির দাবিতে সিলেট নগরীর আম্বরখানা এলাকায় ওসমানী বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এনটিসির মালিকানাধীন লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিকরা। রোববার দুপুরে প্রায় দুই ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখা গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। পরে দুই দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিকরা। দুই দিনের মধ্যে বকেয়া মজুরি প্রদান করা না হলে ফের আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন তারা। তবে আগামী দুদিন আন্দোলন বন্ধ থাকলেও কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানান শ্রমিকরা।

জানা যায়, ৬ সপ্তাহ ধরে মজুরি পাচ্ছেন না সরকারের ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মালিকানাধীন ১৮টি চা বাগানের শ্রমিকরা। মজুরি না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। বকেয়া মজুরির দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা। আন্দোলনের কারণে ৭ দিন ধরে অচল হয়ে পড়েছে সরকারি মালিকানাধীন ১৮ চা বাাগান। বন্ধ রয়েছে এসব বাগানের উৎপাদন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ন্যাশনাল টি কোম্পানির তৎকালীন সব পরিচালকরা পদত্যাগ করেন। এতে কোম্পানিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। বন্ধ হয়ে পড়ে কোম্পানীর সব বাগানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও মজুরি। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বাগান শ্রমিকরা। মাত্র ১৭৮ টাকা দৈনিক মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকরা ৬ সপ্তাহ ধরে মজুরি না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বকেয়া মজুরির দাবিতে গত সপ্তাহ থেকে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন এনটিসির মালিকানাধীন বাগানগুলোর শ্রমিকরা। সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে একযোগে আন্দোলন করছেন তারা। সিলেটে এনটিসির মালিকানাধীন চা বাগানগুলো হলো, লাক্কাতুরা, দলদলি ও কেওয়াছড়া চা বাগান। দেশের ছোট-বড় মিলিয়ে এনটিসির ১৮টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। এই সবগুলো বাগানেই বকেয়া মুজিরর দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা।  

আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, গত দুর্গাপূজার আগ থেকেই তাদের মজুরি ও বোনাসের দাবিতে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পুজার সময়ে বোনাস প্রদান করলেও দেড় মাসের মজুরি বকেয়া রয়ে গেছে।

সিলেটের দলদলি চা বাগানের শ্রমিক সজিব মুন্ডা গণমাধ্যমকে বলেন, যে টাকা মজুরি পাই না দিয়ে সংসারই চলে না। কোনরকমে চালাতে হয়। এরমধ্যে দেড় মাস ধরে মজুরি বন্ধ থাকলে আমরা খেয়ে বাঁচবো কি করে? দোকানে বাকির টাকার অংশ বেকল বড় হচ্ছে। এখন দোকানদারও বাকি দিতে চায় না। ফলে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।
লাক্তাতুরা বাগানের আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, আন্দোলনের শুরুতে প্রথমে তারা সিলেটের জেলা প্রশাসরকর কাছে বকেয়া মজুরির দাবিতে স্মারকলিপি দেন। এরপর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রত্যেক শ্রমিক পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছিলো। এ ছাড়া এ পর্যন্ত আর কোন সাহায পাননি তারা।
রোববারের বিক্ষোভ কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে দুইদিনের আল্টিমেটাম প্রদান করেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা। তিনি নিজেও এনটিসির মালিকানাধীন লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক। রাজু গোয়ালা গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দেড় মাসের মজুরি বকেয়া পড়ে আছে। মজুরি না পেয়ে লক্ষাধিক শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি বলেন, কে সরকারে আসলো বা গেলো তা নিয়ে নীরিহ চা শ্রমিকদের কিছু আসে যায় না। আমরা কোন রাজনীতিতে নেই। আমরা কেবল আমাদের মজুরি চাই।  
লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আক্তার শহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, শ্রমকিদের মতো আমরা নিজেরাও সমস্যায় আছি। আমাদেরও বেতন বন্ধ হয়ে আছে। তবে শুনেছি শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার এমদাদুল হক বলেন, কোম্পানীর ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তন হয়েছে। সে জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা সময় লাগছে। আশা করছি, দু-একদিনের মধ্যে চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *