তৃতীয় দফা বন্যার কবলে সিলেটের মানুষ ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে

তৃতীয় দফা বন্যার কবলে সিলেটের মানুষ ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে

নিজস্ব প্রতিবেদক:: ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটে আবারও নদ-নদীর পানি হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। দ্বিতীয় দফা বন্যার দখল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেন নি সিলেটবাসী। বিভিন্ন উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ যখন আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তনের প্রত্যাশায় অধির আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুণছিলেন, ঠিক তখনই আবার শুরু হয় বৃষ্টি। ইতিমধ্যেই তিনটি নদীর ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে নতুন করে তৃতীয় দফা বন্যার মুখে পড়েছে সিলেট অঞ্চল। নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। 

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড তথ্যমতে,  আজ মঙ্গলবার (২জুলাই) ১২টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমা না ছাড়ালেও পৌঁছে গেছে একেবারে কাছাকাছি। এ পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ মিটার, দুপুর ১২টা পর্যন্ত পানির উচ্চতা ছিল ১০ দশমিক ৭৯ মিটার।  একই সময়ে কুশিয়ারা অমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার, শেওলায় ২৩ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ৯৫ সেন্টিমিটার ও শেরপুরে ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সারিগোয়াইন নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। 

এদিকে লোভাছড়াসহ অন্যান্য নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। তবে যখন তখন তা করতে পারে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৯৪ মিলিমিটার। আর আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি ঝরেছে ৩ মিলিমিটার।
গত দুদিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সিলেট নগরীর অনেক এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে নগরীর মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরি রাজবাড়ি, তালতলা, জামতলা, কুয়ারপার শিবগঞ্জ, শাহজালাল উপশহর, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, মজুমদারি, চৌকিদেখী, দক্ষিণ সুরমাসহ বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।
এছাড়া গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, বিয়ানীবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তুলিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নতুন করে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
নগরীর জামতলা এলাকার বাসিন্দা হিমাংশু চন্দ্র শীল বলেন, এ নিয়ে চলতি মৌসুমে তার ঘরে কয় দফা পানি উঠেছে মনে নেই তার। প্রতিবার পানি ওঠার পর ভাড়া ঘরটি ছেড়ে স্বজনদের বাড়িতে চলে যান।  
নগরের শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা সাব্বির হোসেন বলেন, উপশহরে কিছু হলেই পানি উঠে যায়। বাসাবাড়ির নিচতলায় থাকা যাচ্ছে না। এর জন্য দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, উপশহরে প্রধান সড়ক পর্যন্ত পানিতে তলিয়েছে। বাসাবাড়ির অবস্থা আরও খারাপ।
এদিকে  সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারার ৪টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)  সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। নদীর ওই পয়েন্টে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা, শেরপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সারী নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
সিলেটে এর আগে গত ২৮ মে থেকে ভারী বৃষ্টির ফলে প্রথম দফায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে গত ১৬ জুন আবার বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্ভোগে পড়েন  সিলেটের বাসিন্দারা। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে মঙ্গলবার পর্যন্ত ষষ্ঠবারের মতো জলাবদ্ধ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন  সিলেট নগরের বাসিন্দারা।
পাউবো  সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত সিলেটের জন্য শঙ্কার। চেরাপুঞ্জিতে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সিলেটেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
তিনি বলেন, ভারতের পাহাড়ি ঢলের কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এর আগে দুই দফা পাহাড়ি ঢল এবং  সিলেটে ভারী বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কয় দিন বৃষ্টি না থাকায় পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছিল। এখন আবার বন্যা পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সিলেটে দ্বিতীয় দফায় বন্যায় ১ হাজার ৮১টি গ্রামের ৭লাখ ৩৩৬ জন মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ১৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন ৯ হাজার ৫৬৮ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *