জুবেল আহমদ সেকেল ::উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল কত কয়েদিনের অভিরাম বৃষ্টির কারণে সিলেটের ওসমানীনগরের ৮টি ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক গ্রামের সহ¯্রাধিক ঘর বাড়ি রাস্তা ঘাট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মসজিদ হাঠবাজার ও দোকানপাঠ বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছেন।
উপজেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৮টি ইউনিয়নের এক লক্ষ ৯০ হাজার মানুষ পানিবন্দি তালিকা করা হলেও বাস্তবে দুই লক্ষাধিক মানুষ বন্যাক্রান্ত হয়েছেন বলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও সাদারণ মানুষের নিকট থেকে জানা গেছে। এই অবস্থায় জরুরী আশ্রয় কেন্দ্রে উঠছেন পানিবন্দি এলাকার বাসিন্দারা। আত্মীয়স্বজন বা পরিচিতজনদের বাড়িঘর ও বহুতল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। আর যারা কোথাও যাওয়ার জায়গা পাচ্ছেন না, তারা ছুটছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। গত ২ দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে বিভিন্ন এলাকাতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আকস্মিক ওসমানীনগরের ৮টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৬৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৬৬৭টি পরিবারের ২৯১০ মানুষ আশ্রয় গ্রহন করেন। প্রায় প্রতিদিনই মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠছে। অধিকাংম আশ্রয় কেন্দ্রের আঙ্গিনাই কোনো কেন্দ্র হাটিু কোনো কোনো কেন্দ্রে কোমর সমান পানি। অনেক আশ্রয় কেন্দ্রের পথঘাট আঙ্গিনায় পানি উঠায় এইসব আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে অন্য আশ্রয় কেন্দ্রে স্তানান্তরিত হয়েছেন অনেক বানভাসি মানুষ। অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে উমরপুর, সাদিপুর, বুরুঙ্গা, গোয়ালাবাজার. পশ্চিম পৈলনপুর, তাজপুর, উসমানপুর ইউনিয়নের সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া উপজেলার অন্য ইউনিয়ন গুলোর বেশির ভাগ এলাকার মানুষও রয়েছেন পানিবন্দি। বন্যার পানিতে টিউব ওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকটও দেখা দিয়েছে। গত ৪/৫ দিনের মধ্যে সিলেট-২ আসনের(ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি ৩দিন উপজেলা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বানভাসি মানুষের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিরতরণ করেন। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার বুরুঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি বানবাসি মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিরণ করেন। এর আগে গত বুধবার সন্ধ্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এমপি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান বন্যাকবলিত ওসমানীনগর উপজেলা পরিদর্শন করে সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে ৫ শতাধিক বানভাসি মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।
সাদিপুর ইউপির কালনিচর গ্রামের বাসিন্দা রহমতপুর উচ্চ বিদ্যালয় মেনেজিং কমিটির সভাপতি আহবাব আহমদ তপু বলেন, আমার বাড়িঘর সহ আমাদের ইউনিয়নের প্রায় সবকটি রাস্তাঘাট বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। আমাদের রহমতপুর উচ্চ বিদ্যায়ল আশ্রয় কেন্দ্রে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। কিন্ত বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় প্রচুর পানি উঠেছে।
সাদপিুর ইউপি চেয়ারম্যান ভিপি সাহেদ আহমদ মুছা বলেন, আমার ইউনিয়ন পুরোটাই বন্যাকবলিত হয়ে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে। বন্যাকবলিত মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়া বিভিন্ন আতœীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের বহুতল ভবন সহ উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। আমার ইউনিয়নে পর্যাপ্ত পরিমান ত্রাণের প্রয়োজন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুহেল আহমদ বলেন, উপজেলায় এ পর্যন্ত ৬৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ সব আশ্রয় কেন্দ্রে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৬৬৭টি পরিবারের ২৯১০জন আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৫৪ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ৩৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া যায় যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে।
সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, আমি এবং সরকার ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ, সিলেট তথা দেশের বন্যাক্রান্ত মানুষের পাশে আছি। সাহস ও ধৈর্যের সাথে আমাদেরকে বন্যা মোকাবেলা করতে হবে। আর বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ত্রাণের কোনো অভাব হবে না আমরা প্রয়োজনীয় ত্রাণের ব্যবস্থা করছি।