নিজস্ব প্রতিবেদক:: সিলেটের ওসমানীনগরে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে চাচাতো ভাইদের হাতে আনোয়ার হোসেন (৪৫) খুন হয়েছে। হামলায়মহিলাসহ আরো ৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তার মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক রয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল৮টার দিকে উছমানপুর ইউনিয়নের বেতখাই গ্রামে অতর্কিত হামলার ঘটনাটি ঘটে। নিহত আনোয়ার হোসেন বেতখাই গ্রামেরশফিকুর রহমানের ছেলে। এঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই নুরুল হোসেন বাদি হয়ে ১১জনের নাম উল্লেখ সহ ১৪জনকে আসামী করে গতকাল শনিবারসন্ধ্যায় ওসমানীনগর থানায় একটি হত্যা (মামলা নং–০৪) দায়ের করেন। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মামলার এজাহার নামী ৮আসামীকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ও রাতে গ্রেফতার করেছে ওসমানীনগর থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আসামী বেতখাইগ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে শাহিন মিয়া(৩০), একই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে সিরাজুল ইসলাম বাদশা (৫০), আব্দুলজব্বারের ছেলে আব্দুল কাদির(৫০), সিরাজুল ইসলাম বাদশার স্ত্রী সুলতানা বেগম(৩৩), আব্দুল গণি স্ত্রী আফিয়াবেগম(৪০),আব্দুল কাদিরের স্ত্রী সুফিয়া বেগম(৪৫), আব্দুল কাদিরের ছেলে জবলু মিয়া(২৫) ও আব্দুল জব্বারের ছেলে তজমুলআলী(৩২)।
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে জায়গা সম্পত্তি নিয়ে জিলু মিয়া ও আনোয়ার হোসেন গংদের সাথেএকই বাড়ির চাচাতো ভাই গণি মিয়া, বাদশা মিয়া, কাদির মিয়া ও শাহিন মিয়া গংদের সাথে বিরোধ চলে আসছিল। গত শুক্রবার জিলু মিয়া তার মেয়ের কবর জিয়ারত করে প্রতিপক্ষের ঘরের সামন দিয়ে আসার সময় তাকে মারপিট করা হয়।বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান মিমাংসা করে দেয়ার জন্য রবিবার দিন তারিখ ধার্য করেন। কিন্তু মিমাংসার পূর্বেই গতকাল শনিবারসকা ৮টায় জিলু মিয়া গংরা ঘুমে থাকাবস্থায় গণি মিয়া, বাদশা মিয়া , কাদির মিয়া, শাহিন মিয়া ও সুমন মিয়া গংরা রামদাসহবিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জিলু মিয়া ও আনোয়ার হোসেন গংদের ঘরে হামলা চালায়। এসময় অনেকেই ঘুমে ছিলেন।হামলাকারীরা তাদের ঘর–দরজা ভাঙচুর করে নারী পুরুষকে টেনে বাইরে বের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। তাদেরহামলায় জিলু মিয়া, তার স্ত্রী হেনা বেগম, ছেলে রাসেল মিয়া, জাকির মিয়ার ছেলে মাহিদ ও নুরুল, ঝুনু মিয়ার স্ত্রী মমতা বেগম, শফিক মিয়ার মেয়ে হাছনা বেগম ও নাজমা বেগম আহত হয়। হামলাকারীরা আহত রাসেলের পায়ুপথ দিয়ে লোহার রডও ঢুকিয়েদেয়। হামলার সময় আনোয়ার হোসেন গরু চড়াতে বাড়ির নিকটবর্তী মাঠে ছিলেন। প্রতিপক্ষ সেখানে গিয়ে তাকে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। আহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেভর্তি করা হলে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আনোয়ার হোসেন মারা যান। এছাড়া আহত রাসেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়ছেন তার স্বজনরা।
নিহত আনোয়ার হোসেনের চাচাতো বোন তাহমিনা বেগম বলেন, সুমন মিয়া, বাদশা মিয়া, গণিমিয়া, শাহিন মিয়া ও কাদির মিয়া গংরা রামদাসহ অস্ত্র নিয়ে সকাল ৮টায় আমাদের ঘরে হামলা চালায়। ঘর দোয়ার ভাঙচুর করে আমার পিতা জিলু মিয়া, ভাই রাসেল মিয়াসহ মহিলাদের ঘর থেকে টেনে বের করে কুপাতে শুরু করে। এসময় আমার চাচতো ভাই আনোয়ার হোসেন বাড়ির পাশের মাঠে গরু নিয়ে গিয়েছিলেন। হামলাকারীরা সেখানে গিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যাকরে। আমি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উছমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানওয়ালী উল্যাহ বদরুল বলেন, তাদের দুই পক্ষের মধ্যে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। শুক্রবার ঘরের সামন দিয়ে যাওয়া নিয়েজিলু মিয়ার ওপর হামলার ঘটনাটি মিমাংসার জন্য রবিবার ইউনিয়ন পরিষদে বিচারের দিন ধার্য্য ছিল। কিন্তু শনিবার সকালেইগণি মিয়া, কাদির মিয়া ও বাদশা মিয়া গংরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে আনোয়ার হোসেনকে হত্যাসহ অনেক নারীপুরুষকে আহতকরে। হামলাকারীরা রাসেল নামক যুবকের পায়ুপথ দিয়ে লোহার রড ডুকিয়ে দেয়ায় তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
ওসমানীনগর থানার ওসি রাশেদুল হক হত্যাকান্ডের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।ঘটনার সাথে জড়িত এজাহার নামীয় ৮ আসামীকে গ্রেফতার করা রয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।